স্থিতি কী?
সময়ের পরিবর্তনের সাথে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হয় না, তখন ঐ বস্তুকে স্থিতিশীল বা স্থির বলে। আর এ অবস্থান অপরিবর্তিত থাকাকে বলে স্থিতি।

উদাহরণ:
- একটি বাড়ি
- একটি স্থির টেবিল
- ঘরের দেয়াল
- স্থির অবস্থায় থাকা গাড়ি
স্থিতি নির্ভর করে কিসের ওপর?
স্থিতি নির্ধারণ করতে আমাদের একটি প্রসঙ্গ বিন্দু (Reference Point) দরকার। যদি কোনো বস্তু নির্দিষ্ট একটি বিন্দুর তুলনায় অবস্থান পরিবর্তন না করে, তাহলে সেটি স্থিতিশীল বলে গণ্য হয়।
উদাহরণ:
- আপনি যখন স্কুলে বসে আছেন, তখন আপনি স্কুলের তুলনায় স্থির। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু ঘূর্ণন করছে, মহাবিশ্বের তুলনায় আপনি গতিশীল।
গতি কী?
যদি কোনো বস্তু সময়ের সাথে তার অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে সেটি গতি ।
অথবা,সময়ের পরিবর্তনের সাথে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হয় , তখন ঐ বস্তুকে গতিশীল বলে। আর এ অবস্থান পরিবর্তনকে বলে গতি।

উদাহরণ:
- চলন্ত গাড়ি
- নদীর প্রবাহ
- উড়ন্ত বিমান
- বাতাসে ভাসমান ঘুড়ি
গতির বৈশিষ্ট্য:
- গতি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়।
- গতি নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট তুলনামূলক বিন্দু দরকার।
- বিভিন্ন প্রকার গতি হতে পারে, যেমন— রৈখিক গতি, ঘূর্ণন গতি, স্পন্দন গতি ইত্যাদি।
গতি নির্ণয়ের জন্য তিনটি প্রধান বিষয় প্রয়োজন:
- স্থান (Position): কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুর তুলনায় বস্তুটি কোথায় আছে।
- সময় (Time): কত সময় লাগছে বস্তুটির স্থান পরিবর্তন করতে।
- দূরত্ব (Distance) বা সরণ (Displacement): বস্তুটি কতটুকু পথ অতিক্রম করেছে।
স্থিতি ও গতির সম্পর্ক
একটি বস্তু স্থির নাকি গতিশীল, তা নির্ভর করে কোন বিন্দুর তুলনায় দেখা হচ্ছে।
উদাহরণ:
- ট্রেনে বসে থাকা একজন যাত্রী ট্রেনের তুলনায় স্থির, কিন্তু স্টেশনের তুলনায় সে গতিশীল।
এ কারণে, স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক।
কোন বস্তুর স্থিতি ও গতির মধ্যে পার্থক্য কী?
ক্রমিক নং | স্থিতি | গতি |
১ | সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হয় না | সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হয় |
২ | সকল স্থিতিশীল বস্তুর বেগ শূন্য | সকল গতিশীল বস্তুর বেগ শূন্য অপেক্ষা বড় |
৩ | বস্তুর স্থিতি পরিমাপ করা সম্ভব নয় | বস্তুর গতি বিভিন্ন রাশির সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব |
৪ | মহাবিশ্বের কোনো বস্তুই পরম স্থিতিশীল নয় | মহাবিশ্বের সকল বস্তুই গতিশীল |
স্থিতি ও গতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নোট:
- স্থির বস্তুর সময়ের সাথে অবস্থানের পরিবর্তন হয় না
- গতিশীল বস্তুর সময়ের সাথে অবস্থানের পরিবর্তন হয়
- সব গতিই আপেক্ষিক
- কোন বস্তুর অবস্থান নির্দেশ করার জন্য প্রসঙ্গ বিন্দু প্রয়োজন
- মহাবিশ্বের সমস্ত স্থিতিই আপেক্ষিক
- কোন বস্তুর গতীয় অবস্থা বিভিন্ন কাঠামোতে বিভিন্ন
বিভিন্ন প্রকার গতি (Different Types of Motion)
১. রৈখিক গতি (Linear Motion)
যদি কোনো বস্তু সরলরেখা বরাবর চলে, তাহলে তাকে রৈখিক গতি বলে।
উদাহরণ:
- গাড়ির চলাচল
- দৌড়বিদের দৌড়
সরল রৈখিক গতি প্রয়োগ:
সরল রৈখিক গতি বাস্তব জীবনে বিভিন্নভাবে প্রযোজ্য। কিছু উদাহরণ:
- গাড়ির গতি: রাস্তা ধরে গাড়ির চলাচল সরল রৈখিক গতির একটি উদাহরণ।
- কোনও বস্তুর পতন: একদম উপরে থেকে কোনো বস্তু নিচে পতিত হলে, তা সরল রৈখিক গতিতে চলে।
- এলিভেটর: একটি এলিভেটর উপরে বা নিচে যাওয়া সময় সরল রৈখিক গতির অনুশীলন করে।
2.ঘূর্ণন গতি (Rotational Motion)
ঘূর্ণন গতি (Rotational Motion) এমন একটি গতি যেখানে একটি বস্তুর প্রতিটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট অক্ষের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এই ধরনের গতিতে, বস্তুটি শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তন করে না, বরং এটি একটি নির্দিষ্ট অক্ষের চারপাশে ঘুরতে থাকে। ঘূর্ণন গতি প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম পৃথিবী উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অর্থাৎ যদি বস্তু নিজের অক্ষের চারপাশে ঘোরে, তাহলে তাকে ঘূর্ণন গতি বলে।

উদাহরণ:
- পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারপাশে আবর্তন
- ফ্যানের ঘূর্ণন
ঘূর্ণন গতির প্রয়োগ:
ঘূর্ণন গতি প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট অনেক ঘটনাতে প্রযোজ্য। কিছু উদাহরণ:
- পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের ঘূর্ণন: পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে থাকে এবং একে একদিন বা এক বছর সম্পূর্ণ করতে হয়। পৃথিবী নিজেও তার অক্ষের চারপাশে ঘোরে, যা রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটায়।
- চাকা বা টায়ার: একটি গাড়ির চাকা যখন ঘোরে, তখন তার প্রত্যেকটি বিন্দু ঘূর্ণন গতি অনুসরণ করে। চাকার কৌণিক বেগ এবং ত্বরণ দ্বারা তার গতির পরিবর্তন ঘটে।
- ঘূর্ণায়মান যন্ত্রাংশ: যেমন ঘূর্ণায়মান পাখা, ব্লেন্ডার বা যান্ত্রিক যন্ত্রাংশে ঘূর্ণন গতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা সঠিক কৌণিক বেগ এবং ত্বরণের উপর নির্ভর করে।
৩. চলন গতি কী?
কোন বস্তু যদি এমনভাবে চলতে থাকে যেন বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে চলতে থাকে তহলে তাকে চলন গতি বলে।
চলন গতির উদাহরণ
আমাদের চারপাশে প্রচুর উদাহরণ রয়েছে যেখানে চলন গতি দেখা যায়, যেমন:
- রাস্তা দিয়ে চলা গাড়ি
- আকাশে উড়ন্ত পাখি
- ট্রেনের গতিবিধি
- সাগরে ভাসমান নৌকা
- ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড়দের দৌড়ানো
চলন গতির প্রকারভেদ
চলন গতি প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়:
- সরল চলন গতি (Rectilinear Motion)
- যখন কোনো বস্তু সোজা পথে চলে, তখন তাকে সরল চলন গতি বলা হয়।
- উদাহরণ: রাস্তায় গাড়ির সোজা পথে চলা, টেবিলের উপর বই ঠেলে সরানো।
- বক্ররেখাচলন গতি (Curvilinear Motion)
- যখন কোনো বস্তু বাঁকা পথে চলে, তখন তাকে বক্ররেখাচলন গতি বলা হয়।
- উদাহরণ: ফুটবলে কিক দিলে বলের বাঁকা পথে চলা, গাড়ির বাঁক নেওয়া।
- পর্যাবৃত্ত চলন গতি (Periodic Motion)
- যখন কোনো বস্তু নির্দিষ্ট সময় পরপর একই অবস্থানে ফিরে আসে, তখন তাকে পর্যাবৃত্ত চলন গতি বলা হয়।
- উদাহরণ: পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা, ঘড়ির কাঁটার গতি।
চলন গতির ব্যবহার
চলন গতির ধারণা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেমন:
- যানবাহনের নকশা এবং গতিবিদ্যা
- মহাকাশ গবেষণা ও উপগ্রহ চলাচল
- ক্রীড়া বিজ্ঞান ও শারীরিক কার্যকলাপ
- প্রকৌশল ও নির্মাণকাজ
- রাস্তার যানবাহনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ
৪. পর্যাবৃত্ত গতি কি?
কোন গতিশীল বস্তু যদি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে একই দিকে একইভাবে অতিক্রম করে তাহলে তাকে পর্যাবৃত্ত গতি বলে।
পর্যাবৃত্ত গতির উদাহরণ
আমাদের চারপাশে অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে পর্যাবৃত্ত গতি দেখা যায়, যেমন:
- ঘড়ির পেন্ডুলামের দোলন
- দোলনার দোলানো
- পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা
- গিটার বা তবলার তারের কম্পন
- স্প্রিং এর সাথে ঝুলন্ত বস্তুর দোলন
- হৃদপিণ্ডের স্পন্দন
পর্যাবৃত্ত গতির প্রকারভেদ
পর্যাবৃত্ত গতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
- সরল স্পন্দন গতি (Simple Harmonic Motion – SHM)
- এটি এক প্রকার পর্যাবৃত্ত গতি, যেখানে বস্তু সাম্যাবস্থার চারপাশে দোলন করে।
- উদাহরণ: ঘড়ির পেন্ডুলাম।
- বৃত্তাকার গতি (Circular Motion)
- যখন কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রের চারপাশে ঘূর্ণায়মান হয়, তখন তাকে বৃত্তাকার গতি বলা হয়।
- উদাহরণ: চাকার ঘূর্ণন, পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা।
- কম্পন গতি (Vibratory Motion)
- যখন কোনো বস্তু তার সাম্যাবস্থার চারপাশে খুব দ্রুত ছোট ছোট আন্দোলন করে, তখন তাকে কম্পন গতি বলা হয়।
- উদাহরণ: গিটারের তারের কম্পন, শব্দ তরঙ্গের কম্পন।
পরিমাপের মৌলিক ধারণা
পদার্থবিজ্ঞানে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকে রাশি বলে। বিভিন্ন রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়— স্কেলার রাশি (Scalar Quantity) এবং ভেক্টর রাশি (Vector Quantity)।
স্কেলার রাশি কী?
যে সকল রাশি পরিমাপের জন্য শুধুমাত্র মানই (magnitude) যথেষ্ট ,কোনো দিকের (direction) প্রয়োজন হয় না তাকে স্কেলার রাশি বলে ।
স্কেলার রাশির বৈশিষ্ট্য:
- শুধুমাত্র মান দ্বারা প্রকাশ করা যায়।
- কোনো নির্দিষ্ট দিক থাকে না।
- সাধারণ গাণিতিক যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে হিসাব করা যায়।
স্কেলার রাশির উদাহরণ:
- দৈর্ঘ্য (Length) – 5 মিটার
- ভর (Mass) – 10 কিলোগ্রাম
- সময় (Time) – 2 সেকেন্ড
- তাপমাত্রা (Temperature) – 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস
- কাজ (Work) – 50 জুল
- শক্তি (Energy) – 100 জুল
- ঘনত্ব (Density) – 2.5 গ্রাম/সেন্টিমিটার³
ভেক্টর রাশি কী?
যে সকল রাশি পরিমাপের জন্য মান(magnitude) ও দিক (direction) উভয় প্রয়োজন হয় তাকে ভেক্টর রাশি বলে ।
ভেক্টর রাশির বৈশিষ্ট্য:
- মান ও দিক দুটোই থাকতে হবে।
- নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে যোগ-বিয়োগ করতে হয় (ভেক্টর যোগফল)।
- বস্তুর গতি ও বলের ক্ষেত্রে ভেক্টর রাশি গুরুত্বপূর্ণ।
ভেক্টর রাশির উদাহরণ:
- স্থানচ্যুতি (Displacement) – 20 মিটার উত্তর দিকে
- বেগ (Velocity) – 30 মিটার/সেকেন্ড পশ্চিম দিকে
- ত্বরণ (Acceleration) – 6 মিটার/সেকেন্ড² নিচের দিকে
- বল (Force) – 40 নিউটন ডান দিকে
- ভরবেগ (Momentum) – 50 কেজি·মিটার/সেকেন্ড পূর্ব দিকে
- তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field) – 100 নিউটন/কুলম্ব পূর্বদিকে
স্কেলার ও ভেক্টর রাশির পার্থক্য
ক্রমিক নং | স্কেলার রাশি | ভেক্টর রাশি |
১ | স্কেলার রাশির শুধু মান আছে নিদিষ্ট কোন দিক নেই | ভেক্টর রাশির মান ও দিক উভয় আছে |
২ | দিক পরিবর্তন হলে স্কেলার রাশির মানের কোনো পরিবর্তন হয় না | দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভেক্টর রাশির মানেরও পরিবর্তন হয় |
৩ | স্কেলার রাশির যোগ, বিয়োগ,গুন ইত্যাদি সাধারণ গানিতিক নিয়মে হয় | ভেক্টর রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ ইত্যাদি সাধারণ গানিতিক নিয়মে হয় না। ভেক্টর বীজগণিত এবং জ্যামিতিক উপায়ে হয় |
৪ | দুটি স্কেলার রাশির মধ্যে একটির মান শূন্য না হলে এদের গুনফল শূন্য হয় না | দুটি ভেক্টর রাশির কোনটির মান শূন্য না হলেও এদের গুনফল শূন্য হতে পরে |
৫ | স্কেলার রাশি প্রকাশে শুধুমান ও এককের প্রয়োজন হয় | ভেক্টর রাশি প্রকাশে মান ও এককের সথে দিকেরও প্রয়োজন |
৬ | স্কেলার রাশি একমাত্রিক প্যারামিটার | ভেক্টর রাশি একমাত্রিক,দ্বিমাত্রক, এমনকি ত্রিমাত্রিক প্যারামিটারও হতে পারে |
৭ | দুটি স্কেলার রাশির গুনফল একটি স্কেলার রাশি | দুটি ভেক্টর রাশির গুনফল গুনের প্রকৃতি অনুযায়ী ভেক্টর বা স্কেলার রাশি হতে পারে |
৮ | উদাহরণ: দৈর্ঘ্য, ভর,সময়, তাপমাত্রা ইত্যাদি | উদাহরণ:সরন,বেগ,ত্বরণ, বল ইত্যাদি |
দূরত্ব ও সরণ ( Distance and Displacement)
দূরত্ব কী?
কোন বস্তু যে মোট পথ অতিক্রম করে, তাকে দূরত্ব বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি স্কেলার রাশি, অর্থাৎ শুধু মান থাকে, দিক থাকে না।
- দূরত্ব কখনো নেগেটিভ হতে পারে না।
- বস্তু যে পথেই যাক না কেন, তার মোট অতিক্রান্ত পথই হলো দূরত্ব।
উদাহরণ:
- যদি একজন ব্যক্তি ২০ মিটার সামনে যায়, তারপর আবার ১৫ মিটার পিছনে আসে, তাহলে তার মোট দূরত্ব হবে— ২০+১৫=৩৫মিটার
সরণ কী?
কোন বস্তুর শুরুর বিন্দু থেকে শেষ বিন্দুর সরলরৈখিক দূরত্ব এবং দিক-কে সরণ বলে।
অথবা,একটি নির্দিষ্ট দিকে কোনো একটি গতিশীল বস্তু যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে সরণ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এতে মান ও দিক উভয়ই থাকে।
- সরণ ঋণাত্মক, শূন্য বা ধনাত্মক হতে পারে।
- এটি সর্বদা সরলরেখায় পরিমাপ করা হয়।
উদাহরণ:
উপরের উদাহরণে ব্যক্তি যদি ২০ মিটার সামনে গিয়ে আবার ১৫ মিটার পিছনে আসে, তাহলে তার মোট সরণ হবে—
২০−১৫=৫ মিটার(শুরুর বিন্দু থেকে শেষ বিন্দুর সরল দূরত্ব)
দূরত্ব ও সরণের পার্থক্য
বিষয় | দূরত্ব | সরণ |
প্রকৃতি | স্কেলার রাশি | ভেক্টর রাশি |
দিক নির্ভরশীলতা | দিক নির্ভরশীল নয় | দিক নির্ভরশীল |
মান শূন্য বা নেগেটিভ | শূন্য বা নেগেটিভ হতে পারে না | শূন্য বা নেগেটিভ হতে পারে |
উদাহরণ | ২০ মিটার সামনে গিয়ে ১০ মিটার পিছনে গেলে মোট দুরত্ব ৩০ মিটার | ২০ মিটার সামনে গিয়ে ১০ মিটার পিছনে গেলে মোট সরণ ১০ মিটার |
দ্রুতি ও বেগ: পার্থক্য ও বিশ্লেষণ
দ্রুতি কী?
কোনো একটি গতিশীল বস্তুর সরল বা বক্রপথে স্থান পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি (Speed) বলে। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডের অতিক্রান্ত দূরত্বই দ্রুতি।
দ্রুতির বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি স্কেলার রাশি, অর্থাৎ এতে শুধু মান থাকে, দিক থাকে না।
- এর একক মিটার/সেকেন্ড (m/s) বা কিলোমিটার/ঘণ্টা (km/h)।
- দ্রুতি কখনো ঋণাত্মক (Negative) হতে পারে না, এটি সবসময় ধনাত্মক হয়।
দ্রুতি নির্ণয়ের সূত্র:
দ্রুতি=অতিক্রান্ত দূরত্ব/সময়
উদাহরণ:
একটি গাড়ি যদি ২০০ কিলোমিটার পথ ৪ ঘণ্টায় অতিক্রম করে, তাহলে তার গড় দ্রুতি হবে—
দ্রুতি=200/4=50 km/h
বেগ কী?
কোনো নির্দিষ্ট দিকে সরণের পরিবর্তনের হারকে বেগ (Velocity) বলে।
বেগের বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এতে মান ও দিক উভয়ই থাকে।
- এর একক মিটার/সেকেন্ড (m/s) বা কিলোমিটার/ঘণ্টা (km/h)।
- বেগ ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা শূন্য হতে পারে।
বেগ নির্ণয়ের সূত্র:
বেগ=সরণ/সময়
উদাহরণ:
একটি ব্যক্তি ২০ মিটার সামনে গিয়ে আবার ৫ মিটার পিছনে আসে, তাহলে তার মোট সরণ হবে ১৫ মিটার।
যদি সে এই পথ ৩ সেকেন্ডে অতিক্রম করে, তাহলে তার গড় বেগ হবে—
বেগ=15/3=5 m/s
সুষম বেগ বা সমবেগ: যদি কোন গতিশীল বস্তু একই দিকে সামন সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে চলতে থাকে তবে এর ঐ সরণের হার কে সুষম বেগ বা সমবেগ বলে।
উদাহরণ : মনেকরি একটি গতিশীল বস্তু একই দিকে ১ম সেকেন্ডে ১০ মিটার,২য় সেকেন্ডে ১০ মিটার, ৩য় সেকেন্ডে ১০ মিটার এভাবে চলতে থাকে তবে এই বেগ হবে সুষম বেগ।
অসম বেগ: কোন বস্তু যদি গতিকালে তার বেগের মান বা দিক বা উভয় পরিবর্তন করে তাহলে বস্তুর সেই বেগকে অসম বেগ বলে।
উদাহরণ :মনেকরি একটি গতিশীল বস্তু ১ম সেকেন্ডে ১০ মিটার,২য় সেকেন্ডে ১৩ মিটার, ৩য় সেকেন্ডে ৮ মিটার এভাবে চলতে থাকে তবে এই বেগ হবে অসম বেগ।
দ্রুতি ও বেগের পার্থক্য
বিষয় | দ্রুতি | বেগ |
প্রকৃতি | স্কেলার রাশি | ভেক্টর রাশি |
দিক নির্ভরশীলতা | দ্রুতি দিকের উপর নির্ভর করে না | বেগ দিকের উপর নির্ভর করে |
মান শূন্য না নেগেটিভ | দ্রুতি শূন্য বা নেগেটিভ হতে পারে না | বেগ শূন্য বা নেগেটিভ হতে পারে |
উদাহরণ | গাড়ি ২ ঘন্টায় ১০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করলে তার দ্রুতি ৫০ কিমি/ঘণ্টা | গাড়ি ২ ঘন্টায় ১০০ কিমি গিয়ে ফিরে আসলে তার বেগ ০ কিমি/ঘণ্টা |
ত্বরণ ও মন্দন:
ত্বরণ কী?
যদি কোনো বস্তুর বেগ সময়ের সাথে বৃদ্ধি পায়, তাহলে তাকে ত্বরণ (Acceleration) বলে। অর্থাৎ সময়ের সাথে বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে
ত্বরণের বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এতে মান ও দিক উভয়ই থাকে।
- এর একক মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)।
- ত্বরণ তখনই ঘটে, যখন কোনো বস্তু দ্রুততর হয় বা দিক পরিবর্তন করে।
সুষম ত্বরণ: কোন বস্তুর বেগ যদি নির্দিষ্ট দিকে সব সময় একই হারে বাড়িতে থাকে তাহলে সেই ত্বরণকে সুষম ত্বরণ বলে।
অসম ত্বরণ: সময়ের সাথে বেগ বৃদ্ধির হার সমান না হলে তাকে অসম ত্বরণ বলে। অসম ত্বরণের মান বা দিক বা উভয়ই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়।
মন্দন কী?
যদি কোনো বস্তুর বেগ সময়ের সাথে হ্রাস পায়, তাহলে তাকে মন্দন (Deceleration) বলে। অর্থাৎ সময়ের সাথে বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে।
মন্দনের বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি ঋণাত্মক ত্বরণ, কারণ বেগ কমছে।
- একক মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)।
- মন্দন সাধারণত ব্রেক করা বা বাধার কারণে ঘটে।
ত্বরণ ও মন্দনের পার্থক্য
বিষয় | ত্বরণ | মন্দন |
অর্থ | বেগ বৃদ্ধির হার | বেগ হ্রাসের হারক |
রাশি | ভেক্টর | ভেক্টর |
চিহ্ন | ধনাত্মক (+) | ঋণাত্নক (-) |
উদাহরণ | গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ধিরে ধিরে বেগ দ্রুততর হচ্ছে | গাড়ির ব্রেক করলে ধিরে ধিরে থেমে যাচ্ছে |