তাপ পরিবহন গুণাঙ্ক (Thermal Conductivity) কাকে বলে?

তাপ পরিবহন গুণাঙ্ক (Thermal Conductivity) কাকে বলে?
তাপ পরিবহন গুণাঙ্ক হলো কোনো পদার্থের তাপ পরিবাহীতার একটি পরিমাপক। এটি নির্দেশ করে যে পদার্থের মধ্য দিয়ে কতটা সহজে তাপ প্রবাহিত হতে পারে। সহজ ভাষায়, কোনো বস্তুর দুই বিপরীত পৃষ্ঠের মধ্যে একক তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলে, একক সময়ে ঐ বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ তাপ প্রবাহিত হয়, তাকে ঐ পদার্থের তাপ পরিবহন গুণাঙ্ক বলে। অথবা,তাপ পরিবহন গুণাঙ্ক হলো সেই ভৌত রাশি, যা জানায় যে, কোনো পদার্থ ১ মিটার পুরুত্বের মধ্যে, প্রতি বর্গমিটার এলাকায়, ১°C তাপমাত্রা পার্থক্যের কারণে প্রতি সেকেন্ডে কত জুল তাপ পরিবাহিত করে।

কোন পদার্থের তাপের পরিমান নির্ণয় করো :

কোন পদার্থের তাপের পরিমান নির্ণয় করো
 

দৈর্ঘ্য প্রসারন গুণাঙ্ক কাকে বলে?

দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক হলো কোনো কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা 1 কেলভিন বৃদ্ধি করলে তার একক দৈর্ঘ্যে যে পরিমাণ প্রসারণ ঘটে। একে α (আলফা) প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারন গুণাঙ্ক 0.000012/°kবলতে কী বুঝায়? লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক 0.000012/°C বলতে বোঝায় যে, যদি 1 মিটার দীর্ঘ একটি লোহার দণ্ডের তাপমাত্রা 1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করা হয়, তবে তার দৈর্ঘ্য 0.000012 মিটার বৃদ্ধি পাবে। অন্যভাবে বলা যায়, প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য লোহার দণ্ডের আপেক্ষিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি 0.000012।

তাপ বিকিরণ কাকে বলে?

তাপ বিকিরণ হলো তাপ সঞ্চালনের এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই (মাধ্যম উত্তপ্ত না করে) তাপ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। সহজ ভাষায়, যখন কোনো উত্তপ্ত বস্তু থেকে তাপ শক্তি তরঙ্গ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে তাপ বিকিরণ বলে।

তাপ বিকিরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

  • মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না: তাপ বিকিরণের জন্য কোনো কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এটি শূন্যস্থানের মধ্য দিয়েও সঞ্চালিত হতে পারে। সূর্যের তাপ আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছায় এই প্রক্রিয়ায়।
  • আলোর বেগে সঞ্চালিত হয়: তাপ বিকিরণ তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় এটি আলোর বেগে (প্রায় 3×108 মিটার প্রতি সেকেন্ড) সঞ্চালিত হয়।
  • সরলরেখায় চলে: তাপ বিকিরণ সরলরেখায় গমন করে।
  • উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল: কোনো বস্তু যত বেশি উষ্ণ হবে, তত বেশি পরিমাণে তাপ বিকিরণ করবে।
  • শোষণ ও প্রতিফলন: যখন তাপ বিকিরণ কোনো বস্তুর উপর আপতিত হয়, তখন তার কিছু অংশ শোষিত হয় এবং কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়। বস্তুর রঙ ও প্রকৃতির উপর শোষণ এবং প্রতিফলনের পরিমাণ নির্ভর করে। কালো এবং অমসৃণ বস্তু বেশি তাপ শোষণ করে, পক্ষান্তরে সাদা এবং মসৃণ বস্তু বেশি তাপ প্রতিফলিত করে।
  • তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালী: তাপ বিকিরণ আসলে তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালীর একটি অংশ, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইনফ্রারেড (Infrared) অঞ্চলের মধ্যে থাকে। তবে খুব উচ্চ তাপমাত্রায় দৃশ্যমান আলোকরশ্মিও বিকিরিত হতে পারে (যেমন – উত্তপ্ত লোহার লাল হওয়া)।
তাপ বিকিরণের উদাহরণ:
  • সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসা: এটি তাপ বিকিরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
  • উত্তপ্ত উনুনের চারদিকে তাপ ছড়ানো: উনুন থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমেই আমাদের শরীরে এসে পৌঁছায়।
  • বৈদ্যুতিক হিটারের লাল হওয়া অংশ থেকে তাপ বের হওয়া: এখানে তাপ বিকিরণ এবং সামান্য পরিমাণে পরিবহন ও পরিচলনও ঘটে।
  • আগুন থেকে তাপ ছড়ানো: আগুনের চারপাশের বাতাস উত্তপ্ত হওয়ার পাশাপাশি বিকিরণের মাধ্যমেও আমরা তাপ অনুভব করি।
  • আমাদের শরীর থেকেও তাপ বিকিরণ হয়: যদিও তা আমরা সচরাচর অনুভব করি না। ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে এই বিকিরণ শনাক্ত করা যায়।

 পরিবহন,পরিচলন ও বিকিরণের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করো

পরিবহন,পরিচলন ও বিকিরণের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করো
পরিবহন পরিচলন বিকিরণ
কঠিন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে তাপের স্থানান্তর ঘটে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর স্থানান্তরের মাধ্যমে তাপের স্থানান্তর ঘটে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালিত হয়
অণুগুলো তাদের স্থানে স্থির থেকে কম্পনের মাধ্যমে তাপ শক্তি এক অণু থেকে অন্য অণুতে передает করে উষ্ণ অণুগুলো স্থান পরিবর্তন করে শীতল স্থানে যায় এবং তাপ শক্তি বহন করে। ফলে একটি স্রোতের সৃষ্টি হয় অণুগুলো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নিঃসরণ করে এবং সেই তরঙ্গের মাধ্যমে তাপ শক্তি স্থানান্তরিত হয়
তুলনামূলকভাবে ধীর প্রক্রিয়া পরিবহন থেকে সাধারণত দ্রুত প্রক্রিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রক্রিয়া। আলোর বেগে সঞ্চালিত হয়
প্রধানত কঠিন পদার্থে দেখা যায় তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে প্রধানত দেখা যায় কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং শূন্যস্থান – সকল মাধ্যমেই ঘটতে পারে
গরম পাত্রের হাতল গরম হওয়া, বরফের উপর ধাতব চামচ রাখলে চামচ ঠান্ডা হওয়া গরম বাতাস উপরে উঠে যাওয়া, রেফ্রিজারেটরের ভেতরের বাতাস ঠান্ডা হওয়া, রক্ত সঞ্চালন সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসা, উত্তপ্ত বস্তু থেকে তাপ চারদিকে ছড়ানো, বৈদ্যুতিক হিটারের তাপ
যে কোন পথে তাপ সঞ্চালিত হতে পারে যে কোন পথে তাপ সঞ্চালিত হতে পারে  তাপ সরল পথে সঞ্চালিত হয়

গ্রিনহাউজ ইফেক্ট (Greenhouse Effect) ব্যাখ্যা

গ্রিনহাউজ ইফেক্ট হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত রাখে এবং প্রাণের বিকাশের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা বজায় রাখে। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা কাঁচের তৈরি গ্রিনহাউসের মতো কাজ করে, যা সূর্যের তাপ ধরে রাখে।
গ্রিনহাউজ ইফেক্ট (Greenhouse Effect) ব্যাখ্যা
প্রক্রিয়াটি যেভাবে ঘটে: ১. সৌর বিকিরণ: সূর্য থেকে আগত স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ (যেমন – দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনি রশ্মির কিছু অংশ) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। ২. ভূপৃষ্ঠের উত্তপ্ততা: এই সৌর বিকিরণের কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে এবং এর ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়। ৩. দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ: উত্তপ্ত পৃথিবী তখন দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ (অবলোহিত রশ্মি বা ইনফ্রারেড রেডিয়েশন) নিঃসরণ করে। ৪. গ্রিনহাউজ গ্যাসের শোষণ: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কিছু গ্যাস, যেমন – কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2​), মিথেন (CH4​), জলীয় বাষ্প (H2​O), নাইট্রাস অক্সাইড (N2​O), এবং অন্যান্য গ্যাস এই দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে নেয়। এই গ্যাসগুলোকে গ্রিনহাউজ গ্যাস বলা হয়। ৫. তাপমাত্রা বৃদ্ধি: গ্রিনহাউজ গ্যাস কর্তৃক অবলোহিত রশ্মি শোষিত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তর এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই উষ্ণতা পুনরায় বিকিরিত হয়, যার কিছু অংশ মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং কিছু অংশ আবার ভূপৃষ্ঠের দিকে ফিরে আসে, যা পৃথিবীকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। এই প্রাকৃতিক গ্রিনহাউজ ইফেক্টের কারণেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C) থাকে, যা প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই প্রক্রিয়া না থাকত, তবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C) হত, এবং জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ত।

মানব সৃষ্ট গ্রিনহাউজ ইফেক্ট (Anthropogenic Greenhouse Effect):

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
  • জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার: কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
  • বনভূমি ধ্বংস: গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • কৃষি কার্যক্রম: কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার এবং গবাদি পশুর মল থেকে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়।
  • শিল্প প্রক্রিয়া: কিছু শিল্প প্রক্রিয়া থেকেও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়।
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক গ্রিনহাউজ ইফেক্ট আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) বলা হয় এবং এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, চরম আবহাওয়ার ঘটনা (যেমন – খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়) ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

তিন প্রকার প্রসারণ গুনাঙ্কের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করো।

মনেকরি, একক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বিশিষ্ট একটি বস্তুুর তাপমাত্রা 1°K বৃদ্ধি করলে বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর বৃদ্ধি পায়। আমরা জানি, আদি ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ  = 1 × 1 = 1 বর্গ একক তাপমাত্রা 1°K বৃদ্ধি করার পর বর্তমান ক্ষেত্রফল  = (1+α)×(1+α)= (1+α)2=1+2α +α2= 1+2α    [α অত্যন্ত ক্ষুদ্র বলে উচ্চতর ঘাত বর্জন করে পাই] ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি = বর্তমান ক্ষেত্রফল – আদি ক্ষেত্রফল = 1+2α – 1= 2α
তিন প্রকার প্রসারণ গুনাঙ্কের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করো।
আবার, মনেকরি,একক দৈর্ঘ্য,  প্রস্থ ও উচ্চতা  বিশিষ্ট একটি বস্তুুর তাপমাত্রা 1°K বৃদ্ধি করলে বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা  বরাবর বৃদ্ধি পায়। আমরা জানি, আদি আয়তন = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ × উচ্চতা = 1 × 1 × 1 = 1 ঘন একক তাপমাত্রা 1°K বৃদ্ধি করার পর বর্তমান আয়তন = (1+α)×(1+α)×(1+α )=(1+α)3 =1+3α2+3α+ α3= 1+3α   [αঅত্যন্ত ক্ষুদ্র বলে উচ্চতর ঘাত বর্জন করে পাই] আয়তন  বৃদ্ধি = বর্তমান আয়তন  – আদি আয়তন = 1+3α – 1= 3α
প্রসারণ গুনাঙ্ক
   
Scroll to Top