বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে? 

বাংলা ব্যাকরণ হল সেই শাস্ত্র যা বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এবং ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগবিধি নির্দেশ করে। বিভিন্ন ভাষা-বিজ্ঞানীর মতে, বাংলা ব্যাকরণ হল এমন একটি নিয়ম-কানুন সংকলন যা ভাষাটিকে সঠিকভাবে বলতে, পড়তে ও লিখতে সাহায্য করে। 

আরও স্পষ্টভাবে, বিভিন্ন ভাষা বিজ্ঞানীর মতানুসারে বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞাগুলি হল:

  • ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে: “যে শাস্ত্র জানলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়, তার নাম বাংলা ব্যাকরণ।” 
  • সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে: “বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বলতে বোঝায়, ভাষার গঠনরীতি ও প্রয়োগবিধি বিষয়ক বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা।” 
  • অন্যান্য ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, ব্যাকরণ হল ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-কানুন ও গঠনশৈলীর একটি সুশৃঙ্খল বর্ণনা, যা ভাষা ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি নির্দেশ করে। 

বাংলা ব্যাকরণের ইতিহাস 

বাংলা ব্যাকরণের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং এর বিকাশ বিভিন্ন ধাপে হয়েছে।

  • প্রাচীন যুগ: বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ রচনার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল বেশ দেরিতে, যদিও সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব ছিল প্রবল। অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে বাংলা ব্যাকরণের তেমন কোনো সুসংহত রূপ ছিল না।
  • আদি আধুনিক যুগ (ইউরোপীয়দের অবদান): বাংলা ব্যাকরণ রচনার পথিকৃৎ ছিলেন ইউরোপীয় মিশনারিরা।
    • ম্যানুয়েল দ্য অ্যাসুম্পসাঁও: পর্তুগিজ ধর্মযাজক ম্যানুয়েল দ্য অ্যাসুম্পসাঁও ছিলেন বাংলা ব্যাকরণের প্রথম প্রণেতা। তাঁর লেখা “Vocabulario em idioma Bengalla e Portuguez” (১৭৪৩) গ্রন্থে একটি সংক্ষিপ্ত বাংলা ব্যাকরণ অংশ ছিল। এটি রোমান হরফে লেখা এবং লিসবন থেকে প্রকাশিত হয়।
    • ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড: ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত “A Grammar of the Bengali Language” ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ। এটি ছিল বাংলা মুদ্রাক্ষরে মুদ্রিত প্রথম গ্রন্থ এবং হুগলির মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি বাংলা ব্যাকরণের ভিত্তি স্থাপন করে।
    • উইলিয়াম কেরি: ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে “A Grammar of the Bengalee Language” প্রকাশ করেন, যা বাংলা ব্যাকরণ চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
  • উনিশ শতকে ভারতীয়দের অবদান: ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় পণ্ডিতরা বাংলা ব্যাকরণ রচনায় এগিয়ে আসেন।
    • রাজা রামমোহন রায়: ১৮২৬ সালে তাঁর রচিত “গৌড়ীয় ব্যাকরণ” প্রথম বাংলা ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ। এটি বাংলা ব্যাকরণ রচনার ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
    • এরপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, শ্যামাচরণ সরকার প্রমুখ পণ্ডিতরা বাংলা ব্যাকরণকে আরও সমৃদ্ধ করেন।
  • আধুনিক যুগ: বিংশ শতাব্দী এবং এর পরেও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুকুমার সেন, মুহম্মদ আব্দুল হাই প্রমুখ ভাষাবিজ্ঞানীরা বাংলা ব্যাকরণের গবেষণায় এবং নতুন নতুন ব্যাকরণ রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, যা বাংলা ব্যাকরণকে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শাস্ত্রে পরিণত করে।

 

বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্ব 

বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখে না, বরং ভাষার গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

  • শুদ্ধতা রক্ষা: ব্যাকরণ ভাষার প্রতিটি নিয়ম-কানুনকে সুস্পষ্ট করে, ফলে ভাষা প্রয়োগে ভুলত্রুটি কমে আসে। এটি বাক্য গঠন, শব্দ চয়ন এবং উচ্চারণকে নির্ভুল করতে সাহায্য করে।
  • অর্থের স্পষ্টতা: ব্যাকরণ না জানলে বাক্যের অর্থ বিকৃত হতে পারে। সঠিক পদক্রম, কারক ও বিভক্তির ব্যবহার বাক্যের অর্থকে সুনির্দিষ্ট করে তোলে।
  • সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: ব্যাকরণের নিয়ম সম্পর্কে অবগত থাকলে ভাষাকে আরও সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করা যায়। এটি ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সাহিত্যের মান উন্নয়নে সহায়ক হয়।
  • যোগাযোগ দক্ষতা: নির্ভুল ও সুসংহত ভাষার ব্যবহার কার্যকর যোগাযোগের জন্য অপরিহার্য। ব্যাকরণ এই যোগাযোগ দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে।
  • নতুন ভাষা শেখা: মাতৃভাষার ব্যাকরণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে অন্য ভাষা শেখা সহজ হয়, কারণ ভাষার মৌলিক কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান তৈরি হয়।
  • শিক্ষার ভিত্তি: শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তরে বাংলা ব্যাকরণের জ্ঞান অপরিহার্য। এটি পরীক্ষা প্রস্তুতি থেকে শুরু করে উচ্চতর গবেষণার ভিত্তি তৈরি করে।

 

বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিভাগ 

বাংলা ব্যাকরণকে সাধারণত প্রধানত চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, যদিও এর উপবিভাগও রয়েছে:

১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)

ধ্বনিতত্ত্ব ব্যাকরণের সেই অংশ যা ভাষা উৎপাদিত হওয়ার সময় মানুষের মুখগহ্বর থেকে নির্গত বিভিন্ন ধ্বনি নিয়ে আলোচনা করে।

  • আলোচ্য বিষয়:
    • ধ্বনি: বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজ।
    • বর্ণ: ধ্বনির লিখিত রূপ।
    • বর্ণমালা: বাংলা বর্ণমালা (স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ)।
    • সন্ধি: দুটি ধ্বনির মিলন। (যেমন: হিম + আলয় = হিমালয়)
    • নত্ব-ষত্ব বিধান: ণ এবং ষ-এর ব্যবহারের নিয়ম।
    • ধ্বনি পরিবর্তন: অপিনিহিতি, অভিশ্রুতি, স্বরসঙ্গতি ইত্যাদি।

২. রূপতত্ত্ব বা শব্দতত্ত্ব (Morphology)

রূপতত্ত্ব শব্দের গঠন, পদ পরিবর্তন এবং শব্দের বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করে। এটি ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক, অর্থাৎ শব্দ এবং তার বিভাজন নিয়ে কাজ করে।

  • আলোচ্য বিষয়:
    • শব্দ: ধ্বনির সমষ্টি যা একটি অর্থ প্রকাশ করে।
    • শব্দ গঠন: উপসর্গ, প্রত্যয়, সমাস।
    • পদের শ্রেণিবিভাগ: বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া, অব্যয়।
    • লিঙ্গ, বচন, পুরুষ, কাল: এই বিষয়গুলোর পরিবর্তন ও প্রয়োগ।
    • ক্রিয়া বিভক্তি: ক্রিয়ার কাল ও পুরুষভেদে রূপান্তর।

৩. বাক্যতত্ত্ব (Syntax)

বাক্যতত্ত্ব ব্যাকরণের সেই অংশ যা শব্দ বা পদ দিয়ে কীভাবে বাক্য গঠিত হয়, বাক্যের বিভিন্ন অংশ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

  • আলোচ্য বিষয়:
    • বাক্যের প্রকারভেদ: সরল, জটিল, যৌগিক বাক্য।
    • বাক্য পরিবর্তন: বাচ্য পরিবর্তন (কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য)।
    • পদের বিন্যাস: বাক্যে পদগুলো কীভাবে সাজানো হয়।
    • বাক্যের অংশ: উদ্দেশ্য ও বিধেয়।
    • যতিচিহ্ন/ছেদচিহ্ন: দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদির ব্যবহার।

৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics)

অর্থতত্ত্ব ভাষার শব্দ, পদ এবং বাক্যের অর্থ নিয়ে আলোচনা করে। এটি শব্দের ব্যঞ্জনা, লক্ষ্য এবং আভিধানিক অর্থ ব্যাখ্যা করে।

  • আলোচ্য বিষয়:
    • শব্দের অর্থ: প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, ভিন্নার্থক শব্দ।
    • বাক্যের অর্থ: বাক্যের বিভিন্ন অর্থের স্তর এবং অর্থের পরিবর্তন।
    • বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন: এগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ।
    • সমার্থক শব্দ ও

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • ব্যাকরণ শব্দের ব্যুৎপত্তি – বি+আ+√কৃ+অন
  • ব্যাকরণের কাজ – ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কার করা।
  • পাণিনি ছিলেন – বৈয়াকরণিক। 
  • বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন- ম্যানুয়েল দ্য অ্যাসুম্পসাঁও
  • সর্বপ্রথম বাংলা টাইপ সহযোগে বাংলা ব্যাকরণ মুদ্রণ করেন-ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড।
  • রাজা রামমোহন রায় রচিত বাংলা ব্যাকরণ হলো- গৌড়ীয় ব্যাকরণ।
  • সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত বাঙ্গলা ব্যাকরণ হলো- ভাষা প্রকাশ। 
  • The Origin and Development of the Bengali language গ্রন্থটি রচনা করেন- ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
  • ব্যাকরণ মঞ্জুরি এর লেখক – ড. মুহম্মদ এনামুল হক।
  • ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম- ব্যাকরণ কৌমুদী। 
  • গ্রীক ভাষায় Grammar শব্দটির অর্থ – শব্দশাস্ত্র। 
  • বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ বাংলাদেশের – গাজীপুর অঞ্চলে রচিত হয়।
  • ব্যাকরণ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ – বিশেষভাবে বিশ্লেষণ।

 বাংলা ব্যাকরণ MCQ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) বিগত সালের :

১. “ব্যাকরণ” শব্দের অর্থ কী?
ক) ভাষার ইতিহাস
খ) ভাষার শব্দকোষ
গ) ভাষার নিয়ম
ঘ) ভাষার ব্যুৎপত্তি
উত্তর: গ) ভাষার নিয়ম

২. বচন,লিঙ্গ,পুরুষ ইত্যাদি আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: খ) রূপতত্ত্ব 

৩. প্রকৃতি ও প্রত্যয় বাংলা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: খ) রূপতত্ত্ব

৪. বাগধারা বাংলা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: গ) অর্থতত্ত্ব

৫. ব্যাকরণের উচ্চতর পর্যায়ে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: খ) অর্থতত্ত্ব

৬. রুপতত্ত্বের অপর নাম কী?
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) পদক্রম
গ) ধ্বতত্ত্ব
ঘ) শব্দতত্ত্ব
উত্তর: ঘ) শব্দতত্ত্ব 

৭. সন্ধি বাংলা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব

৮. ক্রিয়ামূল, ক্রিয়ার কাল ও পুরুষ বাংলা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: খ) রূপতত্ত্ব

 

৯. কারক বাংলা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়-
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: ক) বাক্যতত্ত্ব

১০. শব্দতত্ত্বের অপর নাম কী?
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) পদক্রম
গ) ধ্বনিতত্ত্ব
ঘ) রুপতত্ত্ব
উত্তর: ঘ) রূপতত্ত্ব 

১১. Philology শব্দের পরিভাষা কোনটি?
ক) ভাষাবিদ্যা
খ) দর্শনবিদ্যা
গ) মনোবিদ্যা
ঘ) ধ্বনিবিদ্যা
উত্তর: ক) ভাষাবিদ্যা 

১২. বাংলা ব্যাকরণের রুপতত্ত্বের বিষয় কোনটি?
ক) ধ্বনি
খ) বিরাম চিহ্ন
গ) পদক্রম
ঘ) প্রত্যয়
উত্তর: ঘ) প্রত্যয়

১৩.ধ্বনিতত্ত্ব ও শব্দতত্ত্বকে বাক্যে যথাযথভাবে ব্যবহার করার বিধানের নামই-
ক) রসতত্ত্ব
খ) রুপতত্ত্ব
গ) বাক্যতত্ত্ব
ঘ) ক্রিয়ার কাল
উত্তর: গ) বাক্যতত্ত্ব

১৪.শব্দ আলোচিত হয় ব্যাকরণের কোন অংশে?
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) পদক্রম
গ) ধ্বনিতত্ত্ব
ঘ) শব্দতত্ত্ব
উত্তর: ঘ) শব্দতত্ত্ব 

১৫.লেক্সেকোগ্রাফি কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে?
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) অভিধানতত্ত্ব
গ) ধ্বনিতত্ত্ব
ঘ) শব্দতত্ত্ব
উত্তর: খ) অভিধানতত্ত্ব

Scroll to Top